রাজিয়া সুলতানা:
‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই’ এই কবিতাটি আজও তাই মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। এভাবেই জীবন ও নিসর্গের কবি রজনীকান্ত সেন বাবুই পাখি ও শৈল্পিক বাসার বর্ণনা দিয়েছেন তার কালজয়ী ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায়।
তবে গোপালগঞ্জের গ্রামবাংলায় এখন আর আগের মতো বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা চোখে পড়ে না। হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পী, সম্প্রীতি এবং সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা। সময়ের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এ পাখিটি হারিয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা।
১৫-২০ বছর আগেও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তাল, নারিকেল ও সুপারি গাছে ব্যাপকভাবে বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। বাবুই পাখির এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক যোগাত এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করত। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি তাদের প্রধান খাবার। জেলার বিভিন্ন ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা ও পারবেশ বিপর্যয়ের কারনে হারিয়ে যাচ্ছে এসব বাবুই পাখি।
একসময় বিভিন্ন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেত জেলার বিভিন্ন স্থানে। এরমধ্যে অনেক বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। টিকে আছে কিছু দেশি বাবুই। খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমৎকার আকৃতির বাসা তৈরি করত বাবুই পাখিরা। বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির পছন্দের তাল, নারিকেল, সুপারি ও খেজুর গাছ কমতে থাকায় আবাসস্থল সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কৃষিকাজে কীটনাশক ব্যবহার করায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এ পাখি। তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা এ যেন একই বৃন্তে দুটি ফুল। একান্নবর্তী পরিবারের মত এক গাছে দলবদ্ধ বাসা বুনে এদের বাস। বাবুই পাখি একাধারে শিল্পী, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনেরও প্রতিচ্ছবি।
পরিবেশবাদী কর্মী ও বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক রবিন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, এই বাবুই পাখি একসময় গোপালগঞ্জের বিল-বাওর ও তাল গাছে ভরপুর ছিল। মুখরিত ছিলো এদের কিচিরমিচির শব্দে। নানা কারনে বাবুই পাখির অস্তিত্ব বিলুপ্তি ঘটেছে। কৃষিক্ষেতে কীটনাশক ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় এখন আর বাবুই পাখি খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। পরিবেশ বিষয়ে মানুষের অসচেতনতাই বাবুই পাখির বাসাকে বিলুপ্তির পথে নিয়ে গেছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সরদার বলেন, কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির দিকে বাবুই পাখি। পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা এবং বড় বড় তাল, খেজুর, নারিকেল ও বাবলা গাছ না থাকার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে কারিগর পাখি বাবুই। তাই বাবুই পাখি ও এর শৈল্পিক নিদর্শন বাসা রক্ষা করার জন্য দ্রæত সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বর্তমানে বাবুই পাখির আনাগোনা চোখে পড়লেও তালগাছে এদের তৈরি বাসা খুজে পাওয়া যায় না। আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা ও কলকারখানা স্থাপনে কারণে অনেকটা বিলুপ্তির পথে এ বাবুই পাখির বাসা। তাই বাবুই পাখি ও এর শৈল্পিক নিদর্শন বাসা রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
Leave a Reply